- পঞ্চ রবিশস্য একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হবে ।
- একাদশী ব্রত করলে যে কেবল নিজের জীবনের সদগতি হবে তা নয়,একাদশী ব্যক্তির মৃত পিতা-মাতাও নরক থেকে উদ্ধার হতে পারে ।
- একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নিজে নরক বাসী হবে, অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে । কাজেই একাদশী পালন করাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য ।
- একাদশীতে পারন পঞ্জিকাতে একাদশী পালনের সময় দেয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার । নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হয় না , নরকবাসী হতে হয় ।
- একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের পূজাস্মরণ, মনন ও শ্রবণ-কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হবে ।
মাসিক চলাকালীন কি একাদশীর ব্রত পালন করা যায় ?
এক্ষেত্রে 'শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস' এ শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ মহর্ষি শৃঙ্গির বচন উদ্ধৃত করে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন ।
" একাদশ্যাং ন ভূঞ্জিথাঃ নারী দৃষ্টা রজস্যাপি "
অর্থাৎ নারী যদি রজস্বলাও হয় তথাপি একাদশীতে ভোজন করবে না । মানে মাসিক হলেও একাদশী কর্তব্য ।
একাদশীতে কি লবণ খাওয়া যায় ?
অবশ্যই সন্ধুক লবণ ব্যবহার করতে হবে, এটা সব উপবাসের জন্য প্রযোজ্য ।
একাদশীতে কি বাদাম খাওয়া যায় ?
হ্যা । বাদামসহ অন্যান্য আহায্য যেমন — দুধ, কলা, আপেল,আঙ্গুর, আনারস, আখঁ, আমড়া, তরমুজ, বেল, মিষ্টি আলু ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদি খেতে পারেন ।
একাদশীতে মৃত্যু হলে কি হয় ?
একাদশী থাকাকালীন যদি কারো মৃত্যু ঘটে । তাহলে সে স্বর্গ নয়, সরাসরি বৈকুন্ঠলোকে গমন করে ।
একাদশীর আগের দিন কি সহবাস করা যায় ?
না, একাদশী পালনের সময় আমাদের অবশ্যই সংযমী হতে হবে । একাদশীর আগের দিন, সহবাস সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ ।
একাদশীতে কি ঔষধ খাওয়া যাবে ?
একাদশী,জন্মাষ্টমী ইত্যাদি উপবাসে ঔষধ খেলে উপবাস বা ব্রত ভঙ্গ হবে না । এর প্রমাণ স্বরূপ হরিভক্তি বিলাসে (১২/৪০) এবং জৈবধর্ম গ্রন্থে মহাভারতের উদ্যোগপর্ব থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ
অষ্টৈতানাব্রতাঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।
হবির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্।।
অনুবাদ- আটটি দ্রব্য গ্রহনে ব্রত ভঙ্গ হয় না । তা হলো জল, মূল, ফল, দুধ, ঘৃত, ব্রাহ্মণকাম্যা, গুরুদেবের বচন এবং ঔষধ।"
ঔষধে যদি পঞ্চরবিশস্য মিশ্রিত থাকে, তাহলেও তা গ্রহন করা যাবে । কারণ ঔষধের মধ্যে বিভিন্ন দ্রব্যাদির মিশ্রণ থাকাটা স্বাভাবিক ।
যেহেতু মূল শ্লোকের মধ্যে " ঔষধম্" শব্দটি রয়েছে,তাই যে দ্রব্য দিয়েই তৈরি হোক না কেন, যদি তা রোগ সারানোর ঔষধ হয় তবে উপবাসে তা গ্রহনে কোন বাধা থাকতে পারে না ।
একাদশীতে কি সাবু খাওয়া যায় ?
একাদশী তিথির মধ্যে- চাল, গম, তৈল, যব ও ভুট্টা এই পাঁচ প্রকার শস্য থেকে প্রস্তুত কোনো প্রকার খাবার খাওয়া নিষেধ। একাদশী তিথির দৈর্ঘ্য সাধারণত ২৬/২৭ ঘন্টা । এই দীর্ঘ সময় কেউ যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং তার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কার্যক্রম ব্যাহত হবে । সেজন্য একাদশী তিথির মধ্যে একবার যেকোনো ফল, জল এবং দুধ খাবার বিধান আছে, এই সময় সাবুও খাওয়া যায় একারণে যে- সাবু উপরে উল্লেখ করা পাঁচ প্রকার শস্যের মধ্যে পড়ে না ।
সাবু একটি গাছের গুড়ার ফল থেকে তৈরি । ব্যাপারটি কাছাকাছি হলেও কিছুটা ভিন্ন । সাবু, পাম গাছের কাণ্ডের ভেতরের নরম অংশ থেকে তৈরি করা হয় । সাবুতে শর্করা, আমিষ, খনিজ লবন এবং বিভিন্ন রকম ভিটামিন আছে, এটি খুবই সহজপাচ্য বলে সাধারণত শিশু এবং রোগীদেরকে খাওয়ানো হয় ।
একাদশীতে কি জল খাওয়া যায় ?
হ্যা, তবে যারা নির্জলা একাদশী পালন করবেন তারা জলপান করতে পারবেন না । তবে যারা শিশু, তারা পঞ্চ রবিশস্য বাদে সকল ফলমূল এবং জলপান করতে পারেন । তবে সেটা দুপুরের পরে হলে ভালো হয় ।
একাদশীতে কি সিগারেট খাওয়া যায় ?
যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি, সিগারেট পান কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ । শাস্ত্রে এমনিতেই মাদকদ্রব্য গ্রহণকে পাপ বলা হয়েছে । আর এই পাপ যদি আপনি একাদশীর দিন করেন । তাহলে তার ক্ষমা আপনি কোনদিনও পাবেন না । সুতরাং সাবধান । একাদশীর দিন কোন মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না ।
একাদশীর পারন মন্ত্র
"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।”
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পারন করতে হয় ।
একাদশী সংকল্প মন্ত্র
"একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্হিত্বা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনং মে ভবাচ্যুত।।"
অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ হে অচ্যূত আমি একাদশীর দিন উপবাস পূর্বক এই ব্রত পালন করার জন্য আপনার স্মরণ গ্রহণ করছি ।